সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার ০৪ ফেব্রুয়ারী ::
চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীতে স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতা এনেছেন স্থানীয় চাষী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হুমায়ুন কবির। মাত্র ১৫ শতক জায়গায় ১১শ চারা রোপন করে কৃষি খাতে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত করেছেন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে ইউনিয়নের চড়িবিল এলাকায় তার নিজস্ব জমিতে গত বছরের নভেম্বরের দিকে তিনি এ চাষ শুরু করেন। উপজেলা ক্লাইমেন্ট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস এন্ড লাইভলী হুড়স (ক্রেল) প্রকল্পের কারিগরি সহযোগীতায় এবং রাজশাহীর আকাপুঁজি এগ্রিকালচার টেকনোলজিস থেকে ড. মনজুর হোসেনের তত্বাবধানে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি সহজে আবাদযোগ্য এবং অধিক লাভজনক স্ট্রবেরি চাষ করেন। এতে সার্বিক সহযোগীতা করেছেন চকরিয়া উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। বর্তমানে আশাতীত ফলন হওয়ায় তিনি আশার আলো দেখছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সরজমিন তার বাগান ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বর্ণিত ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়ার আলহাজ্ব আকতার আহমদের পুত্র (ডা. ইউনুচের ছোট ভাই) স্ট্রবেরী চাষী হুমায়ুন কবিরের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের শেষের দিকে স্ট্রবেরি চাষ করতে প্রশিক্ষণ নেন রাজশাহী থেকে। সেই সুবাদে ইউনিয়নে ২য় বারের মত স্ট্রবেরি চাষ করে দেখিয়েছেন সফলতা। প্রায় ৪৫/৫০ হাজার টাকা খরচ করে ১৫ শতক জমির চতুর্পার্শ্বে ঘেরা বেড়া দিয়ে জমিটি সংরক্ষণ করা হয়। এর তত্বাবধানে রয়েছে স্থানীয় কৃষক ছালেহ আহমদ। এর পাশাপাশি তিনি ড্রাগন ফল চাষও করছেন। প্রাথমিক ভাবে ড্রাগনের ৬০ টি চারা রোপন করা হয়েছে। এতে খরচ করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। তার দাবী সুষ্ট ভাবে চারা বৃদ্ধি পেলে আগামী ১ বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যাবে।
সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন অংশে রসাল ফল স্ট্রবেরি খুবই জনপ্রিয়, দেশেও এই ফলের আকর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষক পর্যায়ে হুমায়ুনের স্ট্রবেরি চাষ খুটাখালীর কৃষিখাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশ স্ট্রবেরি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর ড. একেএম রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, আলু অথবা বেগুন আবাদের চেয়ে স্ট্রবেরি চাষ সহজ। প্রতিবছর নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে স্ট্রবেরি চারা রোপণ করা যায়। চারা রোপণের এক মাসের মধ্যে এতে ফুল ধরে এবং মার্চ পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায় ফল। প্রতিটি চারা ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম স্ট্রবেরি পাওয়া যায় এবং এক বিঘা জমিতে ৬ হাজার চারা রোপণ করা যায়। তিনি আরো জানান ,কৃষক পর্যায়ে ১ কেজি স্ট্রবেরির দাম প্রায় ৭শ’ টাকা। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত স্ট্রবেরির স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার রয়েছে এবং এতে কৃষকরা ব্যাপক লাভবান হতে পারেন।
সূত্র মতে অন্যান্য শস্যের চেয়ে আবাদ সহজ হওয়ায় বর্তমানে বিপুলসংখ্যক লোক চকরিয়া উপজেলায় বিশেষ করে বেকার যুবকরা জীবিকা নির্বাহে স্ট্রবেরি চাষের ওপর নির্ভরশীল হতে চলছে। বর্তমানে তাদের মত হুমায়ুনও কক্সবাজার, ঈদগাঁও, রামু ও চকরিয়ায় স্ট্রবেরি সরবরাহ করতে পারবেন। এসব স্ট্রবেরি আইসক্রীম, জ্যাম, জেলি, আচার, চকলেট ও বিস্কুট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
জানা গেছে দেশে স্ট্রবেরি গবেষণার পথিকৃত প্রফেসর ড. মনজুর হোসেন জাত উদ্ভাবন, আবাদ সম্প্রসারণে অবদান রেখেছেন। টিস্যুকালচার পদ্ধতিতে স্ট্রবেরির তিনটি জাত রয়েছে। সকল জাত এ অঞ্চলের মাটি ও পরিবেশে উৎপাদন হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের প্রফেসর ড. মনজুর হোসেন জানিয়েছেন, তার নিজস্ব হর্টিকালচার খামারে কয়েক বছরে এসব জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্ট্রবেরি চাষী হুমায়ুন কবির জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ফলন আরো বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি চাষে সফলতা আসলে ভবিষ্যতে সরকারী ও বেসরকারী সহযোগীতা পেলে তিনি লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে স্ট্রবেরি চাষ প্রকল্প আরো বাড়ানোর চেষ্টা করবেন বলে জানান।
পাঠকের মতামত: